প্রিন্ট এর তারিখঃ ১৮ মে, ২০২৪ ১৬:৪২ অপরাহ্ন || প্রকাশের তারিখঃ ১৪ মার্চ, ২০২৪

শ্রীনগরে আলু উত্তোলন শুরু, ফোসকার আক্রমণে উৎপাদণ কম

আলু উত্তোলন শুরু

স্টাফ রিপোর্টারঃ শ্রীনগরে আলু জমিতে ফোসকা রোগের (লেট ব্লাইট) হানায় ফসল উৎপাদণ কম হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় আলু চাষীরা। লেট ব্লাইট আক্রান্ত জমিতে সবুজ গাছ দ্রুত মরে যাওয়ার ফলে এরই মধ্যে আলু উত্তোলন শুরু করেছেন তারা।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ফোসকা রোগের হানায় আলু গাছ পচে গেছে। এতে ক্ষেতে কাঙ্খিত ফলন না পাওয়ার পাশাপাশি আলু সাইজ ছোট হয়েছে। মূলত চলতি মাসের শেষের দিকে পুরোদমে আলু উত্তোলনের কাজ শুরু হবে। ফোসকা রোগ আক্রান্তে জমিতে গাছ মরে বিলীন হওয়ায় আলু উঠাচ্ছেন তারা। স্থানীয়ভাবে জমিতে প্রকার ভেদে প্রতি মণ আলু কেনা বেচা হচ্ছে সাড়ে ৮০০-৯০০ টাকা।  লেট ব্লাইট রোগের আক্রমণে ফসলের কাঙ্খিত ফলন না পাওয়ায় এচাষে স্বপ্ন ভঙ্গ হতে যাচ্ছে শতশত আলু চাষীর।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলায় প্রায় ২২০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষাবাদ করা হচ্ছে। বছরের প্রথম দিকে ঝূর্ণিঝড় ও টানা বৃষ্টিতে প্রায় সাড়ে ৬০০ হেক্টর আলুর জমি নষ্ট হয়। এতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে আক্রান্ত জমিতে পুনরায় বীজ বপণ করেন ক্ষতিগ্রস্তরা। খোলা বাজারে আলুর কেজি প্রকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে বীরতারা, তন্তর, আটপাড়া, কুকুটিয়া, ষোলঘর ইউনিয়নের খৈয়াগাঁও ও পুর্ব দেউলভোগ চকে আলুর চাষাবাদ হচ্ছে। প্রায় ক্ষেতেই ফোসকা রোগের হানার চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। কোথাও কোথাও পুরো জমি জুড়ে রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে। সবুজ আলু গাছ মরে যাচ্ছে। উপজেলার কুকুটিয়ার বিবন্দী এলাকার সোহেল নামে এক কৃষক বলেন, ২ বিঘা জমি ফোসকা রোগে আলু গাছ সব মরে গেছে। তাই আর অপেক্ষা না করে আলু উঠানো হচ্ছে। গাছ আগে মরে যাওয়ায় আলু ফলন অর্ধেকও পাওয়া যাচ্ছেনা। এতে আলু উৎপাদণের ব্যয় খরচও উঠে আসবেনা। এই পরিস্থিতিতে লোকসানের শঙ্কা করেছেন তিনি।  একই এলাকার আলম হোসেন বলেন, তার ১ কানি (১৪০ শতাংশ) আলু ক্ষেতে লেট ব্লাইট রোগে আক্রমণে গাছ লন্ডভন্ড হয়েছে। রোগটি প্রতিরোধে নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। ধারনা করছি কানিতে ২০০-২৫০ মণ আলু পাওয়া যেতে পারে। সমপরিমাণ জমিতে আলু চাষে তার খরচ পড়েছে প্রায় পৌণে ৩ লাখ টাকা। আলুর আশানুরূপ ফলন না পাওয়ার আশঙ্কায় চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ ফুঁটে উঠেছে তার।

রুসদীর ফারুক নামে একজন বলেন, আলু ক্ষেতের পচন রোগ দমনে প্রয়োজনী সব কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন তিনি। কিন্তু তেমন কোন কাজ হয়নি। তার দাবী এ বছর ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি কানি জমিতে আলু চাষে খরচ পড়ছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় পাইকাররা কৃষকের কাছ থেকে আগামভাবে প্রতি মণ আলুর দর হাকাচ্ছেন সাড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ টকা। আলু উত্তোলনের পর ক্ষেত থেকে পাইকাররা নেওয়ার চুক্তিতে কৃষকদের অগ্রিম টাকা দিতে চাইছেন। তবে স্থানীয় আলু চাষীরা এই দরে আলু এখনই বিক্রি করতে চাইছেন না। স্থানীয়দের ধারনা সামনে আলুর পাইকারী বাজার মূল্য বৃদ্ধি পাবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোহসিনা জাহান তোরণ জানান, আলু গাছের পচন দমনরোধে সবাইকে একযোগে একই মাঠে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করার সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে আক্রান্ত জমিতে একেবারে গাছ মরে যাওয়ার পরিমাণ কমেছে। সাইক্সা, সিকিউর, এক্সাট্রামিন এবং প্রয়োজনে সাপেক্ষে অটেনস্টিন কীটনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয় স্থানীয়দের। তিনি জানান, এ বছর উপজেলায় ১৯০০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হচ্ছে। আলুর উৎপাদণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫৭ হাজার মেঃটন।

প্রিন্ট নিউজ