শ্রীনগর (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি: বিক্রমপুর একটি প্রাচীন সমৃদ্ধ জনপদের নাম। অতীতে বিভিন্ন সময়ে বিক্রমপুর ছিল বঙ্গ ও সমতট রাজ্যের রাজধানী।
প্রাচীন তা¤্রলিপিতে একে শ্রীবিক্রমপুর-শ্রীমজ্জায় স্কন্ধাবারাৎ অথাৎ ভিক্টরি ক্যাম্প হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাচীনকালে ভিক্টরি ক্যাম্প আর সমার্থক ছিল মোগল আমলে বিক্রমপু ভুক্তি সুবাহ বাঙালার একটি পরগণা। এক সময় বিক্রমপুর ফরিদপুর জেলার বিস্তৃত অঞ্চল নিয়ে গঠিত ছিল। তবে বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলার অন্তর্গত পাঁচটি উপজেলাই কেবল বিক্রমপুর পরিচয় বহন করে। প্রাচীনকাল থেকেই বিক্রমপুর শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চায় উপমহাদেশের একটি পীঠস্থান হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। অনেকেরই ভুল ধারনা হতে পারে বিক্রমরুরের প্রচীন সভ্যতার প্রায় সব কীর্তি কীর্তিনাশা পদ্মাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে এই অঞ্চলে বিজ্ঞানসম্মত কোনও গবেষনা ও প্রতœতাত্ত্বিক খনন কাজ না করেই দীর্ঘদিনের ভ্রান্ত ধারনা হয়ে আসছে। তবে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন ২০১০ সালে এ অঞ্চলে প্রতœতাত্ত্বিক অনুসন্ধান , খনন ও গবেষণার উদ্যোগ হাতে নেয়। অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. নূহ-উল-আলম লেলিনের উদ্যোগে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহযোগিতায় ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে জেলার রঘুরামপুরে খনন কাজ শুরু হয়। অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তফিজুর রহমানের তত্বাবধানে জাহাঙ্গীরনগর ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞগণ খনন কাজে অংশ গ্রহন করেন। দীর্ঘ কয়েক বছর ধারাবাহিক উৎখনন ও গবেষণার শ্রমসাধ্য সাধনার ফরে রঘুরাপুরে আবিস্কৃত হয় বৌদ্ধবিহারের আংশিকবিশেষ। বিক্রমপুর অঞ্চলে দশম শতাব্দীর যা কিনা এক হাজার বছরের আগের একটি বৌদ্ধবিহার আবিস্কার বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্ত্যন্ত স্মরণীয় ঘটনা। আবিস্কারটি বিক্রমপুরবে শুধু দেশে নয়, বিশ্বের ইতিহাসে নতুন করে জায়গা করে দেবে। কারণ বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনীর কীর্তিমান সন্তান ছিলেন অতিশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান (৯৮০-১০৫৪ খ্রিষ্টাব্দ) তিনি বিশ্ববিখ্যাত বৌদ্ধবিহার নালন্দায় অধ্যয়ন করেন। বৌদ্ধধর্মের অবক্ষয়রোধে রাজা চং ছপের বিশেষ আমন্ত্রণে অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান চীনে গমন করেছিলেন। ১৬ বছর তিনি সেখানে অবস্থান করেন। তিব্বতিরা তাকে সম্মানসূচক হো-বো-জে মানে দ্বিতীয় বুদ্ধ, ভারতবর্ষ ধর্মপাল ও গোটা বিশ্বের বৌদ্ধ সম্প্রদায় মিলে দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান অতীশ উপাধিতে ভূসিত করেন। সদ্য আবিস্কৃত বৌদ্ধবিহারের খনন কাজ ও গবেষণা চলমান থাকলে এ সম্পর্কে আরও গুরুত্বপূর্ণ সূত্র আবিস্কৃত হবে। তারই ইঈিক ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। রামপাল ও বজ্রেযোগিনীতে অনুসন্ধান ও খননে আরও বেশকিছু অমূল্য প্রতœতাত্ত্বিক আবিস্কৃত হয়েছে। প্রথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে সুখবাসপুর, মীরকাদিম, পঞ্চসার, নগর কসবা, সিপাহী পাড়া, দেওসার, সোনারঙ, টঙ্গিবাড়ির নাটেশ্বর প্রভৃতি গ্রাম নিয়ে প্রচীন বিক্রমপুর নগর সুবিস্তৃত ছিল। এরই মধ্যে বিভিন্ন খনন কাজে মিলেছে প্রায় ৫ ফুট দৈর্ঘ্যের কালো পাথরের অক্ষত বৌদ্ধ দেবী মূর্তি, প্রচীন নৌকা, দারু, ও মৃৎ-ভাস্কর্ষ, কাঠের অলঙ্কৃত স্তম্ভ ও মৃৎপাত্র ইত্যাদি। প্রতœতাত্ত্বিক খনন ও সংরক্ষণ এবং গবেষণা কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য আগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন কাজ করে যাচ্ছেন। মুন্সিগঞ্জের যেসব গ্রাম ও জনপদ প্রচীন সমতট ও বঙ্গের রাজধানী হিসেবে চিহ্নিত সেসব এলাকায় পরিকল্পিত ও বিজ্ঞানসম্মত খনন ও অনুসন্ধান অব্যাহত রাখা জরুরী। এরই ধারবাহিকতায় অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন শ্রীনগর শাখার উদ্যোগে রাঢ়ীখালের বালাশুরে বিক্রমপুর যাদুঘর খোলা হয়েছে। যাদুঘরে রাখা হয়েছে আবিস্কৃত সব প্রতœ-নিদর্শন। বিক্রমপুরের গৌরবোজ্জ্বল প্রচীন সভ্যতাতে তুলে ধরা হয়েছে। জনসাধারণের জন্য বিনামূল্যে যাদু ঘর ঘুরে দেখার সুযোগ রয়েছে এখানে।