প্রিন্ট এর তারিখঃ ২০ মে, ২০২৪ ০৯:২৯ পূর্বাহ্ন || প্রকাশের তারিখঃ ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

সিরাজদিখানে শহীদ মিনারে ফুল দেয়াকে কেন্দ্র করে যুবলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে মারামারি, ছবি তোলায় দুই সাংবাদিকে পিটিয়ে আহত

শহীদ মিনারে ফুল দেয়াকে কেন্দ্র করে যুবলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে মারামারি ছবি তোলায় দুই সাংবাদিকে পিটিয়ে আহত

সিরাজদিখান (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদ মিনারে ফুল দেয়াকে কেন্দ্র করে উপজেলা যুবলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে মারামারি ঘটনা ঘটেছে। সে সময় এ ঘটনায় ছবি ও ভিডিও ধারণ করায় প্রশাসনের সামনেই দুই সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করা হয়। বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে উপজেলার রাজদিয়া অভয় পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের শহীদ মিনারে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া ওই দুই সাংবাদিকের মধ্যে একজনের একটি মোবাইল ভেঙে ফেলা হয় ও অন্য জনেরটি ছিনিয়ে নেওয়া হয়। আহত দুই সংবাদকর্মী হলেন, ইনকিলাবের সিরাজদিখান প্রতিনিধি ও লাখোকন্ঠের সিরাজদিখান প্রতিনিধি।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র বুধবার রাতে প্রথমে উপজেলা তাতী লীগের একপক্ষের সভাপতি দাবিদার রাসেল শেখ এবং অন্য পক্ষের সভাপতি দাবিদার আসাদুজ্জামান পক্ষের মধ্যে কাটাকাটি হয়। ঝামেলা এড়াতে শহীদ মিনার থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে মাদক সেবন করে উপজেলা যুবলীগের যুগ্মসম্পাদক জহিরুল ইসলাম পক্ষের শেখ সেলিম ও তার লোকজন জোতা পায়ে ফুল দিতে শহীদ মিনারে উঠে। সে সময় ফুল দেওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। সম্পূর্ণ ঘটনাটি সাংবাদিক ইসমাইল খন্দকার ও আরিফ হোসেন হারিছ ছবি ও ভিডিও করছিলেন। এ কারণে জহিরুল ও সেলিমদের ২০-২৫ জন দুই সাংবাদিককে বেদম পেটায়। সেখানে অবস্থা ঠিক না থাকায় উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ, প্রেসক্লাব সহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারেননি।

মারধরের শিকার আরিফ হোসেন হারিছ বলেন, শহীদ মিনারে মদপ্য অবস্থায়, জুতা নিয়ে ফুল দিতে যায় শেখ সেলিম ও জহিরুলের লোকজন। আমাকে হুমকি-ধমকি দেয়। আমি ভয়ে সেখান থেকে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে চেয়েছিলাম। তারা স্কুলের মাঠে আমাকে আটকায়। এ সময় ২০ থেকে ২৫ জন চতুর দিকে থেকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি লাথি মারতে থাকে। আমার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে। অন্য সহকর্মীদের সহযোগীতায় বেঁচে ফিরি।সে সময় পাশেই দেখি আমাদের আরেক সহকর্মী ইসমাইল খন্দকারকেও একই ভাবে পেটাচ্ছিল তাদের আরো একটি দল। নাক দিয়ে রক্ত ঝড়েছে।শরীরের ব্যথায় বিছানা থেকে উঠতে পারছিনা। সিরাজদিখান প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. মুক্তার হোসেন বলেন,সাংবাদিকদের মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলা হলো। থানার ওসি, ইউএনও সবার সামনে সাংবাদিকদের পেটানো হলো।অথচ কেউ কোনো পদক্ষেপ নিল না। এমন ঘটনায় আমরা লজ্জিত, শংকিত। আমরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছি।থানায় অভিযোগ করতেও ভয় পাচ্ছি আমরা।অভিযোগের বিষয়ে শেখ মো. সেলিম নামের ওই যুবলীগ নেতাকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে শহীদ মিনারে নিজেদের মধ্যে মারামারি, সাংবাদিকদের হুমকি, মারধর ও মাদক সোবনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সিরাজদিখান উপজেলা যুবলীগের ১ নং যুগ্ম আহবায়ক জহিরুল ইসলাম লিটু।

তিনি বলেন, ফুল দেওয়া শেষে সেলিমের দুইটি ছেলের মধ্যে মোটরসাইকেল বের করতে নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছিল। সেটির ভিডিও দুই-একজন করছিলেন। তারা সাংবাদিক কিনা তাৎক্ষণিকভাবে কেউ বুঝতে পারেনি। সে সময় সামান্য ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। তবে সাংবাদিকদের মারধর করা হয়নি। এ ঘটনার সঙ্গে আমি কোনভাবেই সম্পৃক্ত নই।

উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ময়নুল হাসান নাহিদ মু়ঠোফোনে বলেন, আমরা ফুল দিয়ে আসার পরে শহীদ মিনারে মারামারি, সাংবাদিদের হেনস্তা করার একটি ঘটনা শুনেছি। সেখানে যারা মারামারি করেছে তারা কেউ যুবলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। যদি যুবলীগের কেউ জড়িত থাকে দল গঠনতন্ত্র মোতাবেক ব্যবস্থা নিবে।

সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. মুজাহিদুল ইসলাম ঘটনাটি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে এমন ঘটনা কাম্য নয়। আমরা ঘটনা দেখে দুই পক্ষকে যার যার মতো নিরাপদে সরিয়ে দিয়েছি। সাংবাদিকদের পেটানো হলো সরিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কোন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আমরা বিষয়টি দেখছি কি করা যায়।

প্রিন্ট নিউজ