প্রিন্ট এর তারিখঃ ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ ২২:০০ অপরাহ্ন || প্রকাশের তারিখঃ ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০

শ্রীনগরে ভাসমান বেদেরা ফিরছে বিভিন্ন পেশায়

ভাসমান বেদেরা এখন যাযাবর জীবনযাপন ছেড়ে বিভিন্ন পেশাজীবী হিসেবে নিজেদের আত্মপ্রকাশ করছেন

শ্রীনগর (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি: ভাসমান বেদেরা এখন যাযাবর জীবনযাপন ছেড়ে বিভিন্ন পেশাজীবী হিসেবে নিজেদের আত্মপ্রকাশ করছেন। রোদ বৃষ্টি ও ঝড় উপক্ষা করে খালে বিলে কিংবা নদীতে ছোট ছোট নৌকায় করে পরিবার পরিজন নিয়ে অতিকষ্টে জীবনযাপন করে আসছিল তারা। এক সময় পেশা হিসেবে তারা এলাকায় সাপ ও বাননের খেলা দেখিয়ে আয় রুজি করতো। এছাড়াও গ্রাম গঞ্জের বাড়িতে বাড়িতে ও হাট বাজারে এবং বিভিন্ন মেলায় মেলায় চুড়ি-লেইছফিতাসহ নানা ধরনের কসমেটিক বিক্রি করাটাই ছিল বেদে পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস। এখনও দেখা যায় এই অঞ্চলের বিভিন্ন খালে কিংবা নদীর তীর ঘেষা এলাকায় অনেক নৌকায় একত্রিত ভাবে তাদের বসবাস করতে। এরই মধ্যে এই সম্প্রাদায়ের অনেক পরিবার ফিরতে শুরু করছে আধুনিক জীবনযাপনে। মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় এখনও ভাসমান নৌকায় করে অনেক বেদে পরিবারে বসবাস করতে দেখা গেলেও অনেকেই এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন। এমনই লক্ষ্য করা গেছে জেলার শ্রীনগরে। জন্মসূত্র থেকে পাওয়া পেশা ছেড়ে তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজকর্ম করছেন। অনেকে অটোরিক্সাসহ বিভিন্ন কাজ করছেন। আবার কেউ সীমিত পরিসরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসছেন। পরিবারের সন্তানরা স্থানীয় বিদ্যালয় গুলোতে লেখা পড়া করছে। তাদের পোশাক পরিচ্ছেদ ও চালচলায় লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। এরই মধ্যে অনেকেই হয়েছে স্থানীয় ভোটার।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, একসময় শ্রীনগরের বিভিন্ন খালে বিলে শতশত বেদে পরিবারের নৌকা ঘোরাফিরা করতে দেখা যেত। কালের পরিক্রমায় ভাসমান এসব নৌকার সংখ্যা দিন দিন কমছে। তারা এখন স্থায়ী নীড়ের খোঁজে বিভিন্ন পেশায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন। এখনও শ্রীনগর উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন শ্রীনগর-গোয়ালীমান্দ্রা খালের দেউলভোগ ও এর আশপাশে প্রায় দেড় শতাধিক বেদের ভাসমান নৌকা থাকতে দেখা গেছে। তবে এর সংখ্যা কয়েক বছর আগেও দ্বিগুন ছিল। কারণ হিসেবে জানা যায়, অনেক বেদে পরিবার এখন শ্রীনগর সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন আবাসিক ঘরবাড়ি ভাড়া করে বসবাস শুরু করছেন। এর মধ্যে উপজেলা রোডের দেউলভোগে গড়ে তুলেছেন একাধিক টেঁটার কারখানা ও অন্যান্য ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
মো. বাতেন, শহিদুল বলেন, জাত পেশা ছেড়ে এখন তারা টেটা তৈরীর কারখানা গড়ে তুলেছেন। এখানেই বাসা বাড়ি ভাড়া করে থাকছেন তারা। নারীরাও বসে নেই জীবীকারা তাগিদে তারাও বিভিন্ন কাজকর্ম করছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও তাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। প্রাশাসনের পক্ষ থেকেও সরকারিভাবে তাদের ত্রাণ সহায়তা করার পাশাপাশি বিভিন্ন সহযোগিতা করা হচ্ছে। স্থানীয়দের সাথে সামাজিক বন্ধন ও সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে তাদের। এখানে প্রায় ১০/১২টি টেটার কারখানা গড়ে তুলেছেন তারা। এসব কারখানায় অন্যান্য পরিবারের সদস্যরা কাজ করে আয়ও করতে পারছেন। রিয়াদ হোসেন, প্রান্ত, রুবেলসহ অনেকেই বলেন, তারা এখন আর নৌকায় করে ঘুরে বেড়ান না। পুরোন পেশা ছেড়ে তারা নিজেদের ক্রয়কৃত ইজিবাইক চালাচ্ছেন। এতে আয় রুজিও ভালই হচ্ছে। পরিবার পরিজন নিয়ে লোকালয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন বলে জানান তারা।

প্রিন্ট নিউজ