প্রিন্ট এর তারিখঃ ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন || প্রকাশের তারিখঃ ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০

রাণীশংকৈলে কাঁচা মরিচের বাজার লাগামহীন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩ শত টাকায়

কাঁচা মরিচের বাজার লাগামহীন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩ শত টাকায়

হুমায়ুন কবির, রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় গত এক সপ্তাহের মধ্যে কেজিতে কাঁচা মরিচের দাম ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে। পাইকারি বাজারে কিছুটা কম হলেও খুচরা বিক্রি হচ্ছে আরও বেশি। বাজারে সরবরাহ না থাকায় এবং চাহিদা থাকায় দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা।
১১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকালে রাণীশংকৈল পৌর শহরের সবচেয়ে বড় কাঁচা বাজার শিবদিঘীতে পাইকারি প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ২২০ টাকা থেকে ২৩০ টাকা। আবার ওই মরিচই খুচরা বাজাওে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ৩০০ টাকায়।  
কাঁচা মরিচের দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে চলছে বিভিন্ন ধরনের কথা বার্তা। এক একটি কাঁচা মরিচ যেন বিশেষ কিছু। তবে সরবরাহ বৃদ্ধি না পেলে মরিচের দাম কমার আপাতত কোনো লক্ষণ নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। নি¤œ আয়ের মানুষেরা এক প্রকার কাঁচা মরিচ কেনা ছেড়েই দিয়েছ। এদিকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বন্যার কারণে ক্ষেতের মরিচ পচে গেছে, সরবরাহ কম, বাজারে মরিচ নেই। তাই মরিচের বাজারে দামের এ অবস্থা। সরজমিনে কয়েকটি বাজাওে ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় দোকানে কাঁচা মরিচ নেই। পুরো বাজারে দু-একজন ব্যবসায়ীর কাছে অল্পপরিমাণে কাঁচা মরিচ রয়েছে। এগুলো তারা নিজেদের মতো করে দাম নির্ধারণ করে বিক্রি করছেন। প্রতি ১০০ গ্রাম ২৫ থেকে ৩৫ টাকা দাম হাঁকাচ্ছেন।  
শহরের পাশাপাশি এই চিত্র উপজেলার অন্যান্য বাজারেও চলছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। রানীশংকৈলে কাঁচা মরিচের লাগামহীন দামের কাছে অতিষ্ঠ ক্রেতারা। প্রয়োজনের তুলনায় বাজারে কাঁচা মরিচের পরিমান অনেক কম থাকায় বাধ্য হয়ে চড়া দামে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। মাসুদ নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আগে প্রতিদিন আমি ৩০ কেজি মরিচ এনে এখানে বিক্রি করতাম। আজ মরিচ এনেছি ৩ কেজি তারপরও কিছু পচে গেলে লাভের মুখ দেখা কঠিন হবে।  
পৌর শহরের বন্দর গুদরি বাজারে আসা উমরাডাঙ্গী গ্রামের জহুরা ও ঝরণা আক্তার বলেন, ১০০ গ্রাম কাঁচা মরিচ ৩০ টাকায় ক্রয় করলাম। আজগর আলী জানান কি যে হবে ভাই, আধা পোয়া মরিচ ৭০ টাকায় কিনে বাড়ি ফিরতেছি। পাশে থাকা দোকানদার বলেন, আগে এক কেজি আধা কেজি কিনতেন এখন ১০০ গ্রাম মরিচ নিয়ে ঘরে ফিরছেন।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, বাংলাদেশে "মরিচ " একটি জনপ্রিয় মসলা জাতীয় ফল বা খাবার। প্রায় সর্বত্র রান্নায় ঔষধি হিসাবে এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। প্রায় ৭৫০০ বছর আগে আমেরিকার আদীবাসী তথা -ইকুয়েডর এর দক্ষিন পশ্চিম অংশে প্রথম মরিচ চাষের প্রমান পাওয়া যায়।
বিশেষ করে আমাদের দেশে বহুল ভাবে পাওয়া যায় -নগাহরি, সাপের বিষ মরিচ, নাগা মরিচ, বোম্বাই মরিচ ইত্যাদি। এছাড়াও -বগুড়ার- বোনা মরিচ, বাইটা,বালিঝড়া, তরণি, দীঘলা, মানিকগঞ্জের- বিন্দু মরিচ, কুমিল্লার – ইরি মরিচ,মিঠা মরিচ, নরসিংদীর- বাওয়া মরিচ, পাবনার- হলেন্দার মরিচ, কুষ্টিয়ার- আলম ডাঙ্গা মরিচ, মাগুরার- ঠেঙ্গা, জামালপুরি, মাঠউবদা,কামরাঙ্গা, ঘৃতকুমারী,লতা, ধানী, সূর্যমুখী, বারো মাসী মরিচ ইত্যাদি।  
প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় অনন্ত ১ টি কাঁচা মরিচ শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় এবং এটি এন্টি-অস্কিডেন্ট সমৃদ্ধ ভিটামিনের অভাব পূরণ করে থাকে। উপজেলার উত্তরগাঁ এলাকার কৃষক সেলিম, রাজ্জাকসহ আরো অনেকেই এ মরিচ আবাদ করছেন কিন্তু পর পর বৃষ্টি জনিত কারণে সুবিধা করতে পারেনি বলে জানান। বর্তমানে নাটোর, রাজশাহী এলাকার মরিচ উপজেলার বাজারে পাওয়া যাচ্ছে তাও অল্প পরিমানে বললেন কাঁচা মাল ব্যবসায়ীরা।
এ প্রসঙ্গে রানীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয়দেব নাথ বলেন, বর্তমানে চাহিদার তুলনায় মরিচ কম, কৃষকেরা এ সময় যে মরিচ লাগিয়েছিল তা অতি বৃষ্টির কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কৃষকরা ভাদ্রা মরিচ ও হাই ব্রিড মরিচ চারা করে লাগাচ্ছে। এ মাসের শেষের দিকে সম্ভবত আমরা বাজারে দেখতে পাবো।
তিনি এ উপজেলা বাসীর উদ্দেশে বলেন, প্রতিটি পরিবারের উচিৎ বারো মাসি দু'একটি মরিচের গাছ বাড়ির উঠানে লাগিয়ে রাখা।

প্রিন্ট নিউজ