প্রিন্ট এর তারিখঃ ২০ এপ্রিল, ২০২৪ ০৬:৫৭ পূর্বাহ্ন || প্রকাশের তারিখঃ ০৭ নভেম্বর, ২০১৯

পরপর দু’দিন কলকাতার দূষণ ছাড়িয়ে গেল দিল্লিকেও

পরপর দু’দিন কলকাতার দূষণমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে দিল্লিকেও।

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দিল্লিতে সুপ্রিমকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ দিল্লি ও পাঞ্জাব সরকারকে রীতিমতো তুলোধনা করে বলেছে, মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া এখন জীবন-মরণের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপরেই প্রকাশ্যে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের বায়ু দূষণের খবর।

দিল্লির মতো প্রতিবেশী রাজ্যে শস্যের অবশিষ্টাংশ পোড়ানোর ফলে নতুন করে কোনও দূষণ অবশ্য গঙ্গাপারের এই রাজ্যে তেমন হয় না। সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই পশ্চিমবঙ্গের দূষণ মাত্রা সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে।

মঙ্গলবার থেকেই হাওয়াটা ঘুরছিল। বুধবারই দিল্লিকে পেছনে ফেলে দেয় কলকাতা। বৃহস্পতিবারও সেই একই ধারা বজায় রইলো কলকাতাসহ প্রায় গোটা রাজ্যেই।

কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রেকর্ড বলছে, বৃহস্পতিবার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা বাতাসের গুণমান সূচক দিল্লির বিভিন্ন এলাকার থেকে পশ্চিমবঙ্গে অনেক বেশি। শহরের বেশির ভাগ জায়গায় বায়ু দূষণ মনিটরিং স্টেশনের ছবি মোটামুটি একই রকম। উত্তরে সিঁথি থেকে দক্ষিণে বালিগঞ্জ— এই সূচক ৩০০ ছাপিয়ে গিয়েছে।

বিশেষঞ্জদের ভাষায়, স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব খারাপ।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যন কল্যাণ রুদ্র বলেছেন, মূলত ওভারকাস্ট বা মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও বাতাসের গতি কমে যাওয়ার ফলেই কলকাতার এই অবস্থা। আবার পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ও ঘূর্ণিঝড় ‘মহা’র দ্বৈত প্রভাবে দিল্লি লাগোয়া পাঞ্জাব, হরিয়ানা-সহ আশপাশের রাজ্যগুলিতে কিছুটা বৃষ্টি হয়েছে। তার জেরে রাজধানীতে দূষণ মিটার কিছুটা নিম্নমুখী।

পরিবেশ গবেষকরা বলছেন মঙ্গলবার থেকেই হাওড়া ও কলকাতার বাতাসে দূষণের মাত্রা বাড়ছিল। বুধ ও বৃহস্পতিবার তা অনেকটাই বেড়ে গেছে। বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণা (পিএম ১০) ও অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা (পিএম ২.৫) মাত্রা সারা দিনে নামার সুযোগ পায় নি। ফলে কালীপুজা, দীপাবলি বা ছট পুজাতেও যা হয় নি, গত দু’দিন ধরে তাই হয়েছে কলকাতার আকাশ–বাতাসে। কালীপুজা, দীপাবলি ও ছটে বাজির দাপট থাকায় রাতের বাতাসে পিএম ১০ এবং পিএম ২.৫ -র মাত্রা বাড়ছিল। কিন্তু বাতাস শুকনো থাকায় এবং গতিবেগ বেশি থাকায় দূষণের মাত্রা সকাল থেকে কমেও যাচ্ছিল। তখন আবার দিল্লির বাতাসের গতি ছিল কম। তার ওপর বিভিন্ন উৎস থেকে দূষণের মাত্রাও কলকাতার থেকে বেশি ছিল। হাওয়া অফিসের যা পূর্বাভাস, তাতে কাল-পরশুর মধ্যে পরিস্থিতি উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ কলকাতায় বৃষ্টির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হচ্ছে।

তবে কলকাতার একাধিক স্কুল পড়ুয়াদের মাস্ক পরার নির্দেশ দিয়েছে। বুধবার সকাল থেকে কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে বাতাসের গুণমান সূচ ঘোরাফেরা করছিল ৩০০-র আশেপাশে। রাত আটটা নাগাদ সিঁথিতে এই সূচক যায় ৪৪০- এ, পরিবেশবিদদের কথায় যা ‘ভয়াবহ’। অন্যত্রও এই সূচক কোথাও কোথাও ৩৫০ ছাড়িয়ে যায়। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে এই সূচক ঘোরা-ফেরা করেছে ১৫০ থেকে ২০০ -র আশেপাশে, যা সাধারণত ‘মাঝারি’ বা ‘খারাপ’ বলে চিহ্নিত।

দূষণ মাত্রায় রাজধানী দিল্লিকেও ছাপিয়ে যাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। বায়ু দূষণে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় শিশু ও বয়স্কদের। এছাড়াও শ্বাসকষ্টের সমস্যাও এ সময় তীব্র হয়।

ফলে সরকারি তরফে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে কলকাতা এবং হাওড়া জেলার ফুটপাথে বিভিন্ন খাবারের দোকানে কাঠ এবং কয়লায় রান্না বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে দূষণ সৃষ্টিকারী ১৫ বছরের বেশি পুরান গাড়িগুলো রাস্তায় চালানো বন্ধ করার ব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে সরকার। তবে তারপরেও কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী শিল্পাঞ্চলগুলোতে দূষণ কতটা নিয়ন্ত্রণে আসবে, সে ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে পরিবেশবিদদের।

প্রিন্ট নিউজ