প্রিন্ট এর তারিখঃ ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১৮:৫৩ অপরাহ্ন || প্রকাশের তারিখঃ ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

এনআরসি নিয়ে উদ্বিগ্ন পশ্চিমবঙ্গের জনসাধারণ

ছবি : সংগৃহীত

ভারতের আসাম রাজ্যে চূড়ান্ত জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) থেকে বাদ পড়েছেন ১৯ লাখ মানুষ। এরপরে পশ্চিমবঙ্গেও এনআরসি তৈরি করা হবে বলে বার বার ঘোষণা দিচ্ছেন ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির শীর্ষ নেতারা। এরইমধ্যে দিল্লিতে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে দলের সভাপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে এক বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে।

অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে আসছেন, রাজ্যে কোনভাবেই তিনি এনআরসি হতে দেবেন না। বৃহস্পতিবার কলকাতায় এনআরসির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলও করেছেন তিনি।

পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি তৈরির ব্যাপারে বিজেপির ঘোষণায় উদ্বিগ্ন রাজ্যের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। এদের মধ্যে যেমন রয়েছেন বহু সাধারণ মানুষ, তেমনই আছে নানা ক্ষেত্রের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি।

যেসব মানুষ বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ববঙ্গ) থেকে চলে গিয়েছেন তাদের অনেকেই বলছেন, এনআরসি হলে নাগরিকত্ব প্রমাণের বৈধ নথি যোগাড় করতে তাদেরও বেগ পেতে হবে।  

এমনই একজন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। এনআরসি নিয়ে তিনি বলেন, কবে সীমানা পেরিয়েছি, সেটা তো আমার স্মৃতিতে আছে। কোন স্কুলে কত বছর পড়েছি, সেটাও আমার মনে আছে। কিন্তু এসবের যদি কাগজপত্র দিতে বলে, তা তো দিতে পারব না! তবে কী আমাকে বের করে দেবে? সেটাই বা আমি মানব কেন? আর আসামে তো দেখছি, অনেকে বৈধ কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরেও তাদের নাম বাদ দিয়ে দিয়েছে।

সাহিত্যিক মিহির সেনগুপ্তের জন্ম বরিশালে। ব্রজমোহন কলেজে পড়াশোনাও করেছেন তিনি। ১৯৬৩ সালে ভারতে চলে যান তিনি। এতদিন পরে সেসব নথি দেওয়া একরকম অসম্ভব বলে জানিয়েছেন তিনি।

মিহির সেনগুপ্ত বলেন, ভারতে চলে আসার পরে আমি সিটিজেনশিপ সার্টিফিকেট করিয়েছিলাম মূলত পাসপোর্ট বানাতে হবে বলে। কিন্তু সেই সার্টিফিকেট এখন কোথায় থেকে খুঁজে বের করবো ৭৩ বছর বয়সে।

তিনি বলেন, আসলে দেশভাগের সময় থেকেই এই সমস্যা চলে আসছে। একেকবার একেকরকম ডেডলাইন দেওয়া হয়েছে যে তার পরে যারা আসবে, তারা আর নাগরিকত্ব পাবে না। কিন্তু উপমহাদেশ ভাগ হওয়ার এই সমস্যার সমাধান কী এভাবে হয়?

এমন অনেকে আছেন, যাদের পূর্বপুরুষরা চলে এসেছিলেন ভারতে। দুই বা তিন প্রজন্ম পরে এখন তারাও জানেন না সেসব নথি কোথায় আছে। 

এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে নাট্যকার ও অভিনেত্রী খেয়ালী দস্তিদার বলেন, আমাদের আগের প্রজন্মের ক্ষেত্রে তো কোনো কিছুই ডিজিটাইজড ছিল না। তাই তাদের সেসব ডকুমেন্ট কীভাবে যোগাড় করবো ভেবেই তো আমার খারাপ লাগছে। আর যদি এনআরসি হয়, তাহলে যেসব নথির কথা শুনছি, আমার নিজেরই তো সেসব কোথায় আছে জানি না। আমার নিজের জন্ম নিবন্ধন তো কখনও দেখেছি বলে মনে পড়ে না।

এখন আসামের মতো পশ্চিমবঙ্গেও যদি এনআরসি হয়, তাহলে যে শুধু তৎকালীন পূর্ববঙ্গ বা পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা মানুষদের নিজেদের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে, তা নয়। রাজ্যের সব বাসিন্দাকেই নথি যোগাড় করে প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি ভারতীয়।

 

প্রিন্ট নিউজ