প্রিন্ট এর তারিখঃ ২৯ মার্চ, ২০২৪ ১৯:৪৬ অপরাহ্ন || প্রকাশের তারিখঃ ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

বরিশালে ক্রোসিং পুল কেলেঙ্কারী নেপথ্যে কারা?

ছবি : সংগৃহীত

বালিশ, পর্দা আর ঢেউ টিন কাণ্ড নিয়ে দেশব্যাপী হইচই পড়েছে। ঠিক সেই মুহুর্তে তেমনই এক কাণ্ড ঘটেছে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডে। যেখানে একটি রিভার ক্রোসিং পুল স্থাপনে ব্যয় করা হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। যা নিয়ে ঠিকাদারী মহল ও পানি উন্নয়ন বোর্ডে ভেতরগতভাবে চলছে তুমুল আলোচনা। ঠিকাদারদের অভিযোগ পুল স্থাপনের নামে করা হয়েছে পুকুর চুরি। তবে দুর্নীতি নয়, বরং এটিকে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাগেছে, গত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের শেষের দিকে বরিশাল জেলার আওতাধীন ৬টি নদীর পরিচিতির জন্য ১৪টি রিভার ক্রোসিং পুল স্থাপন করা হয়। যার মধ্যে বরিশাল নগর ঘেষে বয়ে যাওয়া কীর্তনখোলা নদীর তিন পয়েন্ট ৬টি, আড়িয়াল খাঁ নদীতে ২টি, কালিজিরা, খয়রাবাদ, সন্ধ্যা ও সুগন্ধা নদীর তীরে ২টি করে রিভার ক্রোসিং পুল স্থাপন করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, প্রতিটি পুলে ৪ ফুটের একটি কলম ও উপরে দুই ফুট বাই আড়াই ফুটের আরসিসি স্লাপ রয়েছে। স্লাপের দু’পাশে হলুদ রং করে তার ওপর কালো রং দিয়ে নদীর নাম ও প্রশস্ততা লেখা রয়েছে। এতেই খরচ দেখানো হয়েছে সর্বনিম্ন ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। মোট ১৪টি রিভার ক্রোসিং পুলি নির্মাণ ও স্থাপনে ব্যয় দেখানো হয়েছে পাঁচ লক্ষাধিক টাকা। যা অতিরঞ্জিত বলে মনে করছেন সাধারণ ঠিকাদাররা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকাভুক্ত দু’জন ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘উন্নয়নের ক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ড যে টাকা ব্যয় করে সেখানে পাঁচ লাখ টাকা বড় কোন বিষয় না। তার পরেও একটি পুল নির্মাণ ও স্থাপনে ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ করা বড় কিছু। এখানে কম বেশি দুর্নীতি অবশ্যই হয়েছে।

তারা বলেন, ‘একটি রিভার ক্রোসিং পুল’ নির্মাণ এবং স্থাপনে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকাও খরচ নেই। কিছু রড, সিমেন্ট, বালু এবং খোয়া দিয়ে ওই মাপের আরসিসি পুল নির্মাণে সর্বোচ্চ ব্যয় হতে পারে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। এছাড়া স্থাপন এবং কেরিং খরচ বাবদ আরো এক থেকে দেড় হাজার টাকা সর্বোচ্চ খরচ হতে পারে। বিল পেতে অফিস ম্যানেজ (ঘুষ) দেয়ার পর বাকি পুরো টাকাই ঠিকাদারের পকেটে চলে গেছে। তাছাড়া কাজের মান নিয়েও অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদারদের।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, পুল নির্মাণ এবং স্থাপন কাজের দায়িত্বে ছিলেন বাবুগঞ্জ সাবডিভিশনের সাব ডিভিশন ইঞ্জিনিয়ার (এসডি) জাবেদ ইকবাল, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসও) গাজী নূর মোহাম্মদ রিপন এবং কার্যসহকারী ছিলেন মো. শামিম হাওলাদার। মূলত এদের তত্ত্বাবধানেই পুল নির্মাণ ও স্থাপন কাজ সম্পন্ন হয়।

এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কাজের কার্য সহকারী শামীম হাওলাদার বলেন, ‘এ কাজে কোন দুর্নীতি হয়নি। এসডি এবং এসও স্যার নিজেরাই কাজের গুনগত মান পরীক্ষা করেছেন।

মেসার্স রূপালী কনস্ট্রাকশন প্রতিষ্ঠানের অধিনে পুল নির্মাণ ও স্থাপনের কাজ করা ঠিকাদার মো. আসলামুল হক কালাম বলেন, ১০ পার্সেন্ট লেসে আমরা ওই ঠিকাদারী কাজটি করেছি। সে হিসেবে মোট বিল পেয়েছে পাঁচ লাখ টাকার কিছু বেশি। ওই টাকা দিয়েই টেন্ডার প্রসেসিং, অফিস ম্যানেজ এবং ইঞ্জিনিয়ারদের পার্সেন্টেজ দিতে হয়েছে। তবে কাজের ক্ষেত্রে কোন প্রকার অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি বলে দাবি এই ঠিকাদারের।

কাজের দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাবুগঞ্জ উপজেলা সাবডিভিশন ইঞ্জিনিয়ার জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘বালিশ বা পর্দা নিয়ে যে কাণ্ড ঘটেছে এখানে তার কিছুই হয়নি। কেননা অল্প টাকার হলেও স্বচ্ছ প্রক্রিয়াতেই কাজটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তাছাড়া কাজটি করার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পাশাপাশি উন্মুক্ত দরপত্র আহবান করা হয়। যেখানে সাতটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। তাদের মধ্যে থেকে রূপালী কনস্ট্রাকশনকে কার্যাদেশ দেয়া হয়।

তিনি বলেন, ‘১৪টি রিভার ক্রোসিং পুল স্থাপনে পাঁচ লক্ষাধিক টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। প্রতিটি পুল নির্মাণ এবং স্থাপনে ব্যয় হয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। শহরের মধ্যে যেসব পুল স্থাপন করা হয়েছে তার থেকে শহরের বাইরের পুলগুলো স্থাপনে খরচ বেশি হয়েছে। সেখানে কেরিং খরচ বেড়েছে। তাতে করে ৫ হাজার টাকা বেশি খরচ হতে পারে। এখানে পুকুর চুরির কিছু নেই বলেও মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।

এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জল সেন বলেন, ‘আমি এই পদে সদ্য যোগদান করেছি। তাই এই রিভার ক্রোসিং পুল স্থাপন সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। পূর্বে যিনি ছিলেন তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তবে সদ্য বদলি হওয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

প্রিন্ট নিউজ